E-Paper

শহরের বুক চিরে ট্রাম লাইব্রেরি

কতটা সফল হবে এই ট্রাম লাইব্রেরি? ট্রেনে, সাবওয়েতে যে সব বুক-মোবাইল সার্ভিস চালু হয়েছে নানা দেশে, তার বেশির ভাগেরই কার্যকারিতার কোনও হিসেব থাকে না। একটি বেশ আকর্ষক স্টাডি দেখেছি আমস্টারডামের ২০ কিলোমিটার পশ্চিমের ছোট শহর হারলেম-কে নিয়ে।

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

অতনু বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ০৮ অক্টোবর ২০২০ ০১:৩৮
Share
Save

কলকাতার বাইরে থেকে আসা অতিথিকে শহর দেখাতে বেরোলে এবার থেকে আর একটা নতুন জিনিস দেখাতে হবে: ট্রাম লাইব্রেরি। শ্যামবাজার-এসপ্লানেডব্যাপী সাড়ে চার কিলোমিটার পথ বেয়ে, কলেজ স্ট্রিটের বুক চিরে।

‘মোবাইল’ লাইব্রেরির ধারণা নতুন কিছু নয়। মানুষ বইয়ের সান্নিধ্যে না পৌঁছতে পারলে বইকে তাঁদের নাগালে পৌঁছে দেওয়ার প্রচেষ্টার নাম কোথাও ‘বুকমোবাইল’, কোথাও বা ‘লাইব্রেরি-অন-হুইলস’। উনিশ শতকের ‘দি আমেরিকান স্কুল লাইব্রেরি’ হোক কিংবা ঘোড়ার গাড়িতে ব্রিটিশ ‘ওয়ারিংটন প্রিঅ্যামবুলেটিং লাইব্রেরি’, বই নিয়ে চাকা গড়ানোর উদ্দেশ্য ছিল একই। স্থানভেদে এর প্রয়োগও হয়েছে বিচিত্র ভাবে। তাইল্যান্ডের দুর্গম অঞ্চলে হাতির সাহায্যে, নরওয়ের ফিয়োর্ড অঞ্চলে নৌকায়, কেনিয়াতে উটে, জিম্বাবোয়েতে গাধার সাহায্যে চলেছে গ্রামীণ ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরি। এ দেশে অন্ধ্রপ্রদেশ লাইব্রেরি অ্যাসোসিয়েশনের উদ্যোগে ‘বোট লাইব্রেরি’ শুরু হয় সেই ১৯৩৫ সালে। আবার বছর দুই আগে, ২০১৮-তে, চলমান লাইব্রেরি চালু হয় ডেকান কুইন আর পঞ্চবটী এক্সপ্রেস, দু’টি ট্রেনে।

কলকাতার ট্রাম লাইব্রেরি সেজে উঠল বই, ম্যাগাজিন, কিছু প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার বই, ই-বুক এবং ফ্রি ওয়াই-ফাই নিয়ে। অন্তত ৩০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে তার যাত্রাপথে। গত কয়েক দশকে বইয়ের চরিত্র বদলেছে ঢের, অস্তিত্বই হয়ে পড়েছে বিমূর্ত। বড় শহরে প্রযুক্তি আসে দ্রুত। চলমান লাইব্রেরিও তার ব্যতিক্রম হতে পারে না।

বছর তিনেক আগে যেমন বেজিংয়ের সাবওয়ের কিছু ট্রেনকে সমৃদ্ধ করা হয় অডিয়ো-বুক দিয়ে। যাত্রাপথে মোবাইল ফোনের সাহায্যে যাত্রীরা খুব সহজেই শুনতে পারবেন এই সব বই থেকে। ২০১২-তে লন্ডনের টিউব রেলে আবার চালু হয় একটা আপাত-মজার প্রকল্প, ‘বুকস অন দি আন্ডারগ্রাউন্ড’। বেশ কিছু বই রাখা হয় ছড়িয়ে ছিটিয়ে, টিউবের নেটওয়ার্কের মধ্যে। টিউব রেলের সিটে কোনও বই পেলে যে কেউ পড়তে পারেন যত ক্ষণ খুশি। দু’বছরের মধ্যে অতলান্তিক পেরিয়ে এই মজা দখল নেয় শিকাগোর সাবওয়েরও।

দু’-দশ জনেরও পড়ার অভ্যাসে, বইয়ের প্রতি ভালবাসার অভিব্যক্তিতে বদল ঘটবে কি এতে? শহর কলকাতার হৃদ্স্পন্দনের গা ঘেঁষে আজকের পৃথিবীতে দাঁড়িয়ে এই উদ্যোগের সারবত্তা বোঝা জরুরি বইকি। এমনিতেই শহরের বিভিন্ন অঞ্চলে স্থানীয় ছোট লাইব্রেরির নাভিশ্বাস ওঠার দশা।

এ চিত্র অবশ্য সার্বিক। ১৯৯৫ সাল নাগাদও আমেরিকাতে চালু ছিল প্রায় হাজারখানেক মোবাইল লাইব্রেরি। ২০১৮-র গোড়ার দিকের পিউ রিসার্চের এক প্রতিবেদনে দেখছি, সংখ্যাটা দাঁড়িয়েছে ৬৫০-এরও কম। এই সবের প্রয়োজনীয়তা এখনও অটুট মূলত গ্রামীণ অঞ্চলে, যেখানে লাইব্রেরি কিংবা পর্যাপ্ত ইন্টারনেটের অভাব রয়েছে। প্রত্যন্ত অঞ্চলে বা ছোট শহরে তাই নিয়মিত বইয়ের জোগান দেওয়াটাই বড় কাজ। লন্ডন, শিকাগো কিংবা বেজিংয়ের মতো মহানগরের ক্ষেত্রে আবার নাগরিকদের যাত্রাপথকে বইয়ের স্পর্শে একটুখানি পেলব করাই হয়তো মুখ্য উদ্দেশ্য। এর প্রেক্ষিতে কলকাতার ট্রাম লাইব্রেরি যেন বহুমুখী উদ্দেশ্য সাধনের এক প্যাকেজ।

কতটা সফল হবে এই ট্রাম লাইব্রেরি? ট্রেনে, সাবওয়েতে যে সব বুক-মোবাইল সার্ভিস চালু হয়েছে নানা দেশে, তার বেশির ভাগেরই কার্যকারিতার কোনও হিসেব থাকে না। একটি বেশ আকর্ষক স্টাডি দেখেছি আমস্টারডামের ২০ কিলোমিটার পশ্চিমের ছোট শহর হারলেম-কে নিয়ে। সেখানকার লাইব্রেরিটা অবশ্য একটু অন্য রকমের। ট্রেনে নয়, ট্রেন স্টেশনে। দেড় লক্ষ জনবসতির এই শহরের স্টেশনে একটি লাইব্রেরি চালু হয় ২০১১-তে, রেলযাত্রীদের জন্য।

একই সঙ্গে এর কার্যকারিতা বোঝার জন্য করা হয় দু’বছরব্যাপী এক সমীক্ষা। লাইব্রেরিটির লক্ষ্যমাত্রায় ছিল প্রথম বছরে ১,০৯০ জন সদস্য, আর দু’বছরে ১,৬৩৪ জন। দেখা যায়, প্রথম বছরে সদস্যসংখ্যা হয়েছে ৭৯৭, যা লক্ষ্যমাত্রার ৭৩%। সমীক্ষাতে এর কারণ হিসেবে দেখা যায় লাইব্রেরিটির অবস্থিতি। এটি স্টেশনের একটি প্ল্যাটফর্মের পশ্চিম দিকে হওয়ায় ট্রেন স্টেশনে যাঁরা আসা-যাওয়া করেন, তাঁদের ৫৭% এই লাইব্রেরির কথা জানতেই পারেননি, নানা ভাবে প্রচার সত্ত্বেও।

তবে সদস্যসংখ্যা লক্ষ্যমাত্রার চাইতে বেশ খানিকটা কম হলেও লাইব্রেরি থেকে সদস্যদের বই ধার করার পরিমাণ দেখা যায় লক্ষ্যমাত্রার দ্বিগুণ। আবার নেদারল্যান্ডসের পাবলিক লাইব্রেরির সদস্যদের সন্তুষ্টির গড় মান ৭.৯ মাথায় রেখে হারলেম স্টেশনের এই লাইব্রেরির সদস্যদের সন্তুষ্টির হারের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৮। সমীক্ষায় কিন্তু এই মান দাঁড়ায় আরও বেশি, ৮.৭।

আমাদের জীবনযাত্রা আন্তর্জালে সম্পৃক্ত হচ্ছে প্রতি দিন আরও বেশি করে। শতাব্দীর ভয়ঙ্করতম অতিমারি আমাদের আন্তর্জাল নির্ভরতাকে গাঢ়তর করেছে। এর মধ্যে বই ও মানুষের রসায়নে বদল আনতে পারবে িক কলকাতার ট্রাম?

ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিস্টিক্যাল ইনস্টিটিউট, কলকাতা

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Tram Library Editorial Kolkata Tram

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে আপনার সাবস্ক্রিপশন আপনাআপনি রিনিউ হয়ে যাবে

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

SAVE 29%*
এক বছরে

১১৯৯

১১৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

১৪৯

১২৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।