E-Paper

ঢিলেঢালা নজরদারি, হাবড়ায় ফিরেছে প্লাস্টিক

পুর কর্তৃপক্ষ ২০১৮ সালের  ১ জানুয়ারি থেকে শহরে প্লাস্টিক ও থার্মোকলের ব্যবহার সম্পূর্ণ ভাবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন।

যত্রতত্র: প্লাস্টিকের ব্যবহার শহরে। ছবি: সুজিত দুয়ারি

যত্রতত্র: প্লাস্টিকের ব্যবহার শহরে। ছবি: সুজিত দুয়ারি

সীমান্ত মৈত্র 

শেষ আপডেট: ১২ অক্টোবর ২০২০ ০১:৫৮
Share
Save

হাতে হাতে ঘুরছে প্লাস্টিক। চাল-ডাল-পটল-বেগুন-মাছ-মিষ্টি— সবই দোকান থেকে গৃহস্থের বাড়ির পথে যাচ্ছে প্লাস্টিক-বন্দি হয়ে। ক্রেতা-বিক্রেতা দু’তরফই প্লাস্টিকের ব্যবহার নিয়ে নির্বিকার। আখেরে যার প্রভাব পড়ছে শহরের নিকাশি ব্যবস্থায়। প্রয়োজন মিটে গেলে ফেলে দেওয়া প্লাস্টিক জমছে নালা-নর্দমায়। থমকে যাচ্ছে জলের গতি। জমা জলে ডেঙ্গির মশার সংসার বাড়ার আশঙ্কা যেমন থাকছে, তেমনই জল বেরোতে না পেরে নালা উপচে শহরের পথঘাটও জলে ডোবার আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে। পথে-ঘাটে পড়ে থাকা প্লাস্টিকে জল জমে সেখানেও মশার বংশবৃদ্ধি সম্ভব।

কাপড় বা পাটের ব্যাগ বাজারে-দোকানে খুঁজে পাওয়া মুশকিল হাবড়ায়। অনেকেই বাড়ি থেকে বাজার করতে ব্যাগ আনেন না। প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ ঠিকই পেয়ে যাবেন, সেই ভরসা আছে।

কয়েক বছর ধরে এলাকায় জ্বর-ডেঙ্গি ছড়ালেও প্লাস্টিক ও থার্মোকলের ব্যবহার নিয়ে হুঁশ ফিরল না হাবড়াবাসীর। অভিযোগ, পুরসভা বা প্রশাসনও প্লাস্টিকের যথেচ্ছ ব্যবহার বন্ধ করতে উদাসীন।

লকডাউনের শুরু থেকেই হাবড়া শহরে প্রকাশ্যে রমরমিয়ে চলছে প্লাস্টিকের ক্যারিবাগের ব্যবহার। হাবড়া বড়বাজার, চালবাজার, তেঁতুলতলা বাজার, পাটপট্টি, কালীবাড়ি বাজার, বাণীপুর, কইপুকুর-সহ সর্বত্রই শহরের পথে প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ চোখে পড়ল। পলিথিন দিয়ে অস্থায়ী দোকানের ছাউনিও দেওয়া হয়েছে। জানতে চাওয়া হলে, এক দোকানি বললেন, ‘‘সকলেই তো আবার প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ ব্যবহার করছে। পুরসভা থেকেও তো আর কিছু বলা হয়নি।’’এক ব্যক্তি ক্যারিব্যাগে মাছ নিয়ে যাচ্ছিলেন। প্লাস্টিক ব্যবহারের ফলে নিকাশি আটকে জ্বর-ডেঙ্গি ছড়াতে পারে জানেন? উত্তর মিলল, ‘‘বাড়ি থেকে দ্রুত বেরিয়ে পড়েছিলাম। ব্যাগ আনতে ভুলে গিয়েছি।’’

বিক্রেতাদের যুক্তি, প্লাস্টিকের বদলে কাপড়ের ব্যাগে খরচ অনেক। তাই বাধ্য হয়ে প্লাস্টিকের ব্যাগ ব্যবহার করতে হয়।

এলাকায় ঘুরে দেখা গেল, বেশ কিছু বাড়ির পিছনে প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ, থার্মোকল ফেলে রাখা হয়েছে। তাতে জল জমেছে। মিষ্টির দোকান ও বিরিয়ানির দোকান থেকেও প্লাস্টিকের পাত্র দেওয়া হচ্ছে ক্রেতাদের। মানুষ প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ নিকাশি নালায় ফেলছেন।

পুর কর্তৃপক্ষের দাবি, পুরসভার কর্মীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে জমা জলের খোঁজ নিচ্ছেন। প্লাস্টিক, থার্মোকলের ব্যবহার না করতে সচেতন করা হচ্ছে। যদিও দেখা গেল, যশোর রোডের ফুটপাতে লঙ্কা, আনাজ, ফুল বিক্রি করছেন বিক্রেতারা। তাঁরা প্লাস্টিকের ব্যাগে মালপত্র দিচ্ছেন। চায়ের দোকানে প্লাস্টিকের কাপে চা দেওয়া হচ্ছে। লোকজন সেই কাপে চুমুক দিয়ে আড্ডা মারছেন।

২০১৭ সালে হাবড়া শহরে জ্বর-ডেঙ্গির প্রকোপ ছড়িয়েছিল। বহু মানুষ আক্রান্ত হন। অনেকে মারাও গিয়েছিলেন। ওই সময়ে জ্বর ও ডেঙ্গির প্রকোপের কারণ খতিয়ে দেখে পুর কর্তৃপক্ষের মনে হয়েছিল, প্লাস্টিক ও থার্মোকলের যথেচ্ছ ব্যবহার ছিল জ্বর-ডেঙ্গি ছড়ানোর অন্যতম বড় কারণ। তা ছাড়া, মাত্রাতিরিক্ত প্লাস্টিকের ব্যবহারে দূষণ ছড়াচ্ছিল। এরপরেই পুর কর্তৃপক্ষ ২০১৮ সালের ১ জানুয়ারি থেকে শহরে প্লাস্টিক ও থার্মোকলের ব্যবহার সম্পূর্ণ ভাবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন। এলাকার মানুষকে প্লাস্টিক দূষণ সম্পর্কে সচেতন করতে পুরসভার তরফে প্রচার কর্মসূচি নেওয়া হয়। শহরের ৭৮টি ব্যবসায়ী সংগঠনের প্রতিনিধি, পুলিশ সকলকে নিয়ে পুর কর্তৃপক্ষ বৈঠক করেন। নাগরিক কনভেনশনের আয়োজন করা হয়। স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলাদের প্রচারের কাজে লাগানো হয়েছিল। বাজার-হাটে, দোকানে পুরসভা ও পুলিশের নিয়মিত ধরপাকড় চলত। প্রচুর প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ ও পলিথিন বাজেয়াপ্ত হয়।

এ সবের জেরে প্লাস্টিকের ব্যবহার কার্যত বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু ২০১৮ সালের নভেম্বর মাস থেকে নতুন করে প্লাস্টিকের ব্যবহার শুরু হয়। ওই বছরের অক্টোবর মাসে হাবড়া পুরসভার মেয়াদ হয়। অভিযোগ, তারপর থেকেই প্লাস্টিক নিয়ে নজরদারি কমে যায় পুরসভার। সেই সুযোগে ফিরে আসে প্লাস্টিকের ব্যবহার। লকডাউনের শুরু থেকে তা যথেচ্ছ ভাবে বেড়ে গিয়েছে।

গত বছরও এলাকায় জ্বর-ডেঙ্গি ছড়িয়েছিল। মাস কয়েক আগে পুরসভার প্রশাসক হয়েছেন প্রাক্তন পুরপ্রধান নীলিমেশ দাস। প্রকাশ্যে যে প্লাস্টিকের ব্যাগ ব্যবহার হচ্ছে, তা মেনে নিয়ে নীলিমেশ বলেন, ‘‘প্রথমে আমরা প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ, পলিথিন ও থার্মোকলের ব্যবহার প্রায় ৯৫ শতাংশ বন্ধ করতে পেরেছিলাম। এখন করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় সব থেকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি। করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হলে প্লাস্টিকের ব্যবহার বন্ধ করতে আবারও পদক্ষেপ করা হবে। তবে শহরবাসী সচেতন না হলে সমস্যা মিটবে না।’’

প্লাস্টিকের ব্যবহার নিয়ে সিপিএমের হাবড়া শহর এরিয়া কমিটির সম্পাদক আশুতোষ রায়চৌধুরী বলেন, ‘‘প্লাস্টিকের ব্যবহার পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা পুরসভার পক্ষে সম্ভব নয়। প্লাস্টিকের উৎপাদন ও বিপণনের ব্যবস্থা হচ্ছে। অথচ বলা হচ্ছে, ব্যবহার করা যাবে না। আমরা প্লাস্টিকের ব্যবহারের বিরুদ্ধে। কিন্তু এ জন্য বিকল্প ব্যবস্থা ও সার্বিক পরিকল্পনা করতে হবে।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Habra Plastic Pollution

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে আপনার সাবস্ক্রিপশন আপনাআপনি রিনিউ হয়ে যাবে

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

SAVE 29%*
এক বছরে

১১৯৯

১১৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

১৪৯

১২৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।